উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, দলীয়করণ ও দুর্নীতি রোধ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ বৃদ্ধি, গবেষণা খাতে ইউজিসি কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ বাড়ানো, আমলাতান্ত্রিকতা ও অনিয়ম দূর করা, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যৌথ গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণসহ উচ্চ শিক্ষা সংস্কারে মোট ১৫টি প্রস্তাব পেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজের নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল এ প্রস্তাব পেশ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিরা হলেন অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ড. ইসরাফিল শাহীন, অধ্যাপক ড. অতনু রব্বানী, ড. মো. আহসান হাবীব, অধ্যাপক ঈশানী চক্রবর্তী, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম ও অধ্যাপক সংগীতা আহমেদ।
নিচে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হলো
প্রতিটি একাডেমিক ডিসিপ্লিনের টপ কনফারেন্সে অংশ নেয়ার জন্য ‘ইউজিসি কনফারেন্স ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ড’ প্রবর্তন করা যেতে পারে। পাবলিক ও প্রাহভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যৌথ গবেষণার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও ভিজিটিং ফেলো, স্কলার ও ফ্যাকান্টি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে। বহির্বিশ্বের (বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ) অভিজ্ঞতা রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিদ্যমান বেতন কাঠামো রিভিউ করা এবং তা বৃদ্ধির ব্যাপারে ইউজিসি উদ্যোগ নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কৌশলপত্র পরিকল্পনা ও প্রণয়নে অংশীজন হিসেবে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুন্ত করা প্রয়োজন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে নিপীড়ন, নির্যাতন ও বৈষম্য রোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ইউজিসি একটি ‘কোড অব কনডাক্ট’ তৈরি করে নির্দিষ্ট সময় পর পর তার ওপর প্রশিক্ষণের (অনলাইন/অফলাইন) ব্যবস্থা করতে পারে। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের (প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক) অভিজ্ঞ/বিশেষজ্ঞ শিক্ষক/ শিক্ষাবিদের মাধ্যমে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে শিক্ষার দর্শন, শিক্ষাদান পদ্ধতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ইত্যাদি প্রসঙ্গ থাকতে পারে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান ভর্তি পরীক্ষাকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা এবং তা অধিকতর শিক্ষার্থীবান্ধব করা। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, দলীয়করণ ও দুর্নীতি রোধে ইউজিসি একটি সমন্বিত দিকনির্দেশনা প্রস্তুত ও প্রয়োগ করার প্রস্তাব দিতে পারে।
স্বল্প-মধ্যম-দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি রিসার্চ ইউনিভার্সিটিতে উন্নীত করতে ইউজিসি কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। নিরপেক্ষ সমীক্ষার মাধ্যমে বাজারের চাহিদা ও একাডেমিক প্রয়োজন যাচাই করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সংখ্যা এবং বিদ্যমান কোর্স-কারিকুলাম পুনর্বিন্যাসে ইউজিসি যুগোপযোগী পরামর্শ দিতে পারে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপমুক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ ১৯৭৩ সালের আদেশ সংশোধনের সুপারিশ করছে। এক্ষেত্রে ইউজিসি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
Source: Bonik Barta